মধুপুর শহর পরিচিতি: টাঙ্গাইলের সবুজ বন, জনপদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
![]() |
মধুপুর শহর
কোথায় অবস্থিত?
<<<মধুপুর উপজেলা মানচিত্র>>>
মধুপুর শহর বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ
পৌর এলাকা। এটি রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৩৭ কিলোমিটার এবং টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায়
৫১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শালবন এবং আদিবাসী সংস্কৃতি
মধুপুরকে একটি ব্যতিক্রমধর্মী জনপদে পরিণত করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক কাঠামো
অবস্থান: ২৪°৩৭′ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০°১.৫′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
আয়তন: ২৪.৭৭ বর্গকিলোমিটার
উচ্চতা: ১৯ মিটার (৬২ ফুট)
প্রতিষ্ঠা: ১৯৯৫ সালে পৌরসভা ঘোষণা
শাসনব্যবস্থা: পৌরসভার দায়িত্বে আছেন ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা)
জনসংখ্যা ও ঘনত্ব
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী:
মোট জনসংখ্যা: ৫৬,৩৪২ জন
ঘরসংখ্যা: ১৩,৭১৩ টি
জনঘনত্ব: প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ২,৩০০ জন
নারী-পুরুষ অনুপাত: প্রায় সমান
শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান
মধুপুরে শিক্ষার হার ও মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে।
সাক্ষরতার হার: ৫৬.৭% (পুরুষ: ৫৮.৭%, নারী: ৫৪.৫%)
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ:
প্রাথমিক বিদ্যালয়:
মধুপুর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়
চারালজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
তারার মেলা কিন্ডার গার্টেন
মধুপুর প্রিপারেটরি স্কুল
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়:
মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
রানী ভবানী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
মধুপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
মধুপুর গড় — প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য
<<<ভাওয়ালের গড় কোন অঞ্চলে অবস্থিত>>>
মধুপুর শহরের কেন্দ্রীয় আকর্ষণ মধুপুর গড়, যা বাংলাদেশের অন্যতম বড়
শালবন হিসেবে পরিচিত।
এখানে রয়েছে:
হরিণ, বানর ও বন্যপ্রাণী
নানা প্রজাতির পাখি ও গাছপালা
পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
যোগাযোগ ব্যবস্থা
মধুপুর একটি ত্রিমুখী সড়ক যোগাযোগের কেন্দ্র:
সংযোগ রয়েছে: টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ
যানবাহন: বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার
সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যকে করেছে সমৃদ্ধ
অর্থনীতি ও স্থানীয় বাজার
মধুপুর বাজার এ অঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।
এখানে পাওয়া যায়:
আনারস, কাঁঠাল, কলা, সবজি
বনজ ও কৃষিজ পণ্য
পণ্য রপ্তানি হয় রাজধানীসহ দেশের নানা অঞ্চলে
আদিবাসী সংস্কৃতি ও গারো জনগোষ্ঠী
মধুপুর শহরে বসবাসরত গারো ও কোচ জনগোষ্ঠী এখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে
বিশেষ অবদান রাখছে।
তাদের রয়েছে:
নিজস্ব পোশাক, ভাষা ও জীবনধারা
বার্ষিক উৎসব ও নৃত্য-গান
পরিবেশ সংরক্ষণে যুগ যুগ ধরে অবদান
তথ্যসূত্র:
<<<মধুপুর গড় কোন জেলায় অবস্থিত>>>
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS), ২০১১
Tangail District Profile
স্থানীয় পৌরসভার নথিপত্র
মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় কোথায় অবস্থিত
মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়: টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার বিস্তৃত প্রাকৃতিক
শালবন
মধুপুর গড় ও ভাওয়াল গড় — এই দুই বিখ্যাত শালবন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল,
গাজীপুর এবং ঢাকা জেলার কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত। এদের একত্রে সাধারণভাবে “মধুপুর গড়
অঞ্চল” বলা হলেও,
ভৌগোলিক ও প্রশাসনিকভাবে এই বনভূমি দুটি অংশে ভাগ করা যায়:
মধুপুর গড় কোথায় অবস্থিত?
মধুপুর গড়ের উত্তরাংশটি মূলত টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা এবং আংশিকভাবে
গাজীপুর জেলার মধ্যে বিস্তৃত। এই অঞ্চলে মধুপুর জাতীয় উদ্যান (Madhupur National
Park) অবস্থিত, যা পরিবেশগতভাবে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল।
ভাওয়াল গড় কোথায়?
ভাওয়াল গড় মূলত গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা এলাকায় অবস্থিত। এই গড়টির
পাশেই রয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, এবং এটি মির্জাপুর মাস্টারবাড়ি থেকে হোতাপাড়া
পর্যন্ত বিস্তৃত। উল্লেখযোগ্যভাবে, গাজীপুর সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের নামও “ভাওয়াল
গড়”।
সারাংশ:
মধুপুর গড় বিস্তৃত টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা ও গাজীপুর জেলার
অংশবিশেষে।
ভাওয়াল গড় অবস্থিত গাজীপুর জেলার সদর উপজেলায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের
পাশে।
পুরো অঞ্চলটি মিলে গঠন করেছে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শালবন-ভিত্তিক
জীববৈচিত্র্য এলাকা।
মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় আয়তন কত
মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি
বিস্তৃত উঁচু ভূমি, যার মোট আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গকিলোমিটার। এই গড় অঞ্চলটি দেশের
তিনটি জেলার — গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ — কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত।
ভৌগোলিক অবস্থান ও গঠন
মধুপুর গড় গড় অঞ্চলের উত্তরাংশ, যা মূলত টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা
এবং ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ভাওয়াল গড় গড় অঞ্চলের দক্ষিণাংশ, যা গাজীপুর জেলা এবং তার আশপাশের
অংশ জুড়ে অবস্থিত।
সম্পূর্ণ এলাকাটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত এবং প্রাকৃতিকভাবে এটি একটি
উঁচু ভূখণ্ড বা টেরেস এলাকা।
শালবন ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
এই গড় অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিস্তৃত শালবন (স্থানীয়ভাবে
পরিচিত গজারি বন)। এ বনে রয়েছে:
প্রাচীন শালগাছের বিস্তার
বানর, হরিণসহ নানাবিধ বন্যপ্রাণী
গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বসতি
এছাড়াও, এই অঞ্চলে অবস্থিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উদ্যান:
মধুপুর জাতীয় উদ্যান (টাঙ্গাইল অংশে)
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান (গাজীপুর অংশে)
মধুপুর শহর –প্রশ্নাবলি (FAQ)
প্রশ্ন ১: মধুপুর শহর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মধুপুর শহর বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে
প্রায় ১৩৭ কিলোমিটার এবং টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৫১ কিলোমিটার দূরে, উত্তর-পূর্ব
দিকে অবস্থিত।
প্রশ্ন ২: মধুপুর শহর কিসের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর: মধুপুর শহর বিখ্যাত এর শালবন “মধুপুর গড়”, আনারস, কাঁঠাল ও
কলার উৎপাদন এবং গারো আদিবাসী সংস্কৃতির জন্য।
প্রশ্ন ৩: মধুপুর গড় কী?
উত্তর: মধুপুর গড় একটি বৃহৎ শালবন, যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক
বনাঞ্চল। এটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং জীববৈচিত্র্যে
পরিপূর্ণ।
প্রশ্ন ৪: মধুপুরের জনসংখ্যা কত?
উত্তর: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মধুপুর শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায়
৫৬,৩৪২ জন, এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনঘনত্ব প্রায় ২,৩০০ জন।
প্রশ্ন ৫: মধুপুরে কোন কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে?
উত্তর: মধুপুরে প্রধানত গারো ও কোচ আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। তারা
তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, উৎসব ও ভাষা নিয়ে এক অনন্য ঐতিহ্য বহন করে।
প্রশ্ন ৬: মধুপুরের প্রধান পণ্য কী?
উত্তর: মধুপুরের প্রধান কৃষিপণ্য হলো আনারস, কাঁঠাল, কলা এবং বিভিন্ন
মৌসুমি সবজি। এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
প্রশ্ন ৭: মধুপুর শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন?
উত্তর: মধুপুর শহর একটি ত্রিমুখী সড়কপথ কেন্দ্র, যেখান থেকে টাঙ্গাইল,
জামালপুর ও ময়মনসিংহে সরাসরি যাওয়া যায়। বাস ও প্রাইভেট যানবাহনে যাতায়াত সহজ ও সুলভ।
প্রশ্ন ৮: মধুপুরে শিক্ষার হার কত?
উত্তর: মধুপুর শহরে গড় সাক্ষরতার হার প্রায় ৫৬.৭%। পুরুষদের মধ্যে
এই হার ৫৮.৭% এবং নারীদের মধ্যে ৫৪.৫%।
প্রশ্ন ৯: মধুপুর শহরে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে?
উত্তর: মধুপুরে রয়েছে মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
রানী ভবানী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়
এবং বেশ কিছু কিন্ডার গার্টেন।
প্রশ্ন ১০: মধুপুর শহরের আয়তন কত?
উত্তর: মধুপুর শহরের মোট আয়তন ২৪.৭৭ বর্গকিলোমিটার, এবং এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে ১৯ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।
উপসংহার
মধুপুর শহর শুধু একটি শহর নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক ও আর্থ-সামাজিক
কেন্দ্রবিন্দু। শালবন, আদিবাসী সংস্কৃতি, কৃষিপণ্য, এবং উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা — সব
মিলিয়ে এই শহরটিকে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় জনপদে পরিণত করেছে।