আসসালামু আলাইকুম হাই আমি মোঃ মুনজুরুল, এই ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।

দলিলে ভুল থাকলে নামজারি বা খারিজ করবো কীভাবে – ধাপে ধাপে আইনসম্মত সমাধান ২০২৫

 

দলিলে ভুল থাকলে নামজারি বা খারিজ করবো কীভাবে – ধাপে ধাপে আইনসম্মত সমাধান ২০২৫

ভূমিকা 

জমি কেনাবেচা বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তির পর নামজারি বা খারিজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক সময় দলিলে ভুল থাকলে অনেকেই হতাশ হয়ে যান—ভাবেন নামজারি আর সম্ভব নয়। যেমন:

  • দাগ নম্বর ভুল
  • খতিয়ান নম্বর ঠিক নেই
  • মালিকের নাম বা ঠিকানায় ভুল
  • জমির চৌহদ্দি অস্পষ্ট

আসলে এসব সমস্যা আইনসম্মতভাবে সমাধান করা যায়। আজকের এই পোস্টে জানবেন, কীভাবে ধাপে ধাপে দলিলে ভুল সংশোধন করে নামজারি করবেন, এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল এড়াতে কী করবেন।

দলিল ও রেকর্ড যাচাই করুন

সবার আগে আপনার দলিলটি হাতে নিন এবং নিচের বিষয়গুলো যাচাই করুন:

  • দাগ নম্বর (Plot No.)
  • খতিয়ান নম্বর
  • মালিকের নাম, পিতা/স্বামীর নাম
  • ঠিকানা ও জমির চৌহদ্দি
  • রেকর্ড (CS, SA, RS, BS) ও হাল খতিয়ান

কেন জরুরি?

নামজারি আবেদন করার সময় ভূমি অফিস আপনার দলিলের তথ্য বর্তমান রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। যদি এখানে গরমিল থাকে, নামজারি আটকে যাবে।

ভুল থাকলে Rectification Deed তৈরি করুন

দলিলের ভুল তথ্য শুধরাতে চাইলে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো Rectification Deed (সংশোধন দলিল) করা।

কবে সম্ভব?

যদি দলিলদাতা জীবিত থাকেন এবং দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া থাকে।

কীভাবে করবেন?

আইনজীবীর মাধ্যমে Rectification Deed খসড়া তৈরি করুন

মূল ভুল তথ্য ও সংশোধিত সঠিক তথ্য লিখুন

উভয় পক্ষ দলিলে স্বাক্ষর করুন

রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে নতুন সংশোধিত দলিল রেজিস্টার করুন

স্মরণীয় বিষয়: Rectification Deed করতে চাইলে আগের মূল দলিল অবশ্যই দেখাতে হবে।

দলিলদাতা মারা গেলে কী করবেন?

যদি দলিলদাতা মারা যান, বা জীবিত থেকেও সংশোধনে সহযোগিতা না করেন, তাহলে আপনাকে যেতে হবে সিভিল কোর্টে।

করণীয়:

Rectification Suit নামক মামলা দায়ের করুন

প্রমাণ দিন যে দলিলে কেবল দাগ নম্বর বা নাম ভুল আছে, জমির দখল ও অবস্থান ঠিক আছে

আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সেই আদেশ অনুযায়ী সংশোধিত দলিল তৈরি করুন

এটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তবে এটি আইনসম্মত ও স্থায়ী সমাধান।

সংশোধনের পর নামজারির আবেদন

যখন সংশোধিত দলিল আপনার হাতে থাকবে (চাই সেটা Rectification Deed হোক বা আদালতের রায়), তখন আপনি নিয়ম মেনে নামজারির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কী কী কাগজপত্র লাগবে?

সংশোধিত দলিল বা কোর্টের রায়

পূর্ববর্তী খতিয়ান/CS/RS কপি

খাজনা পরিশোধের রসিদ

দখলের প্রমাণ (যেমন: পাকা ঘর, গাছ, সীমানা প্রাচীর ইত্যাদি)

নামজারি ফরম

আবেদন প্রক্রিয়া:

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা AC Land অফিসে ফরম সংগ্রহ করুন

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করুন

শুনানি ও তদন্ত শেষে নামজারি সম্পন্ন হবে

দালালের উপর নির্ভর না করে নিজে করুন

আমাদের দেশে এখনও অনেকেই দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে এসব কাজ করান। এতে:

খরচ বেশি হয়

জালিয়াতির ঝুঁকি থাকে

হয়রানির শিকার হতে হয়

তাই যতদূর সম্ভব নিজেই দলিল যাচাই, সংশোধন ও নামজারির কাজ করুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নিন, কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী এড়িয়ে চলুন।

ভবিষ্যতে সতর্ক থাকুন – যেন আর ভুল না হয়

জমি কেনার সময় বা দলিল রেজিস্ট্রির আগে নিচের বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখে নিন:

  • দাগ, খতিয়ান ও জমির চৌহদ্দি রেকর্ড অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা
  • দলিল লেখক সঠিকভাবে তথ্য লিখেছেন কিনা
  • রেজিস্ট্রির পরে দলিলের কপি নিজে যাচাই করে নিন
  • রেকর্ড ও দখল মিলিয়ে নিন

এতে ভবিষ্যতে নামজারি বা দলিল সংশোধনের ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে।

কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)

১. দলিলে দাগ নম্বর ভুল থাকলে কি নামজারি হয়?

উত্তর: হয়, তবে Rectification Deed করে সংশোধন করতে হবে। দলিলদাতা না থাকলে কোর্টের মাধ্যমে সংশোধন করে তারপর নামজারি করতে হবে।

২. Rectification Deed করতে কত খরচ হয়?

উত্তর: সাধারণত রেজিস্ট্রেশন ফি ও আইনজীবীর ফি মিলিয়ে ৫০০০–১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে (অবস্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে)।

৩. কোর্টে Rectification Suit করতে কত সময় লাগে?

উত্তর: মামলার জটিলতা ও আদালতের কাজের চাপ অনুযায়ী এটি ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

৪. নামজারির জন্য কি খাজনা দিতে হবে?

উত্তর: হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট জমির খাজনা পরিশোধ করে তার রসিদ জমা দিতে হয় নামজারি আবেদনের সময়।

৫. দালালের মাধ্যমে নামজারি করলে কী সমস্যা হয়?

উত্তর: অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া, ভুল তথ্য দিয়ে কাজ করা, বা পরে আইনগত জটিলতার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিজেই বা বিশ্বস্ত আইন সহায়তা নিয়ে কাজ করাই উত্তম।

উপসংহার

দলিলে ভুল থাকলেই নামজারি থেমে যাবে — এই ধারণা ভুল। আইন অনুযায়ী Rectification Deed বা কোর্টের মাধ্যমে সংশোধন করে সহজেই নামজারি করা সম্ভব। শুধু দরকার ধৈর্য, সচেতনতা ও সঠিক তথ্য জানা।

আপনার জমির মালিকানা রক্ষায় নিজেই উদ্যোগ নিন — কারণ সঠিক তথ্যই আপনার অধিকার নিশ্চিত করে।

 

পোস্টটি যদি আপনার উপকারে আসে, তবে শেয়ার করুন – যেন অন্যরাও সচেতন হয়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url