আসসালামু আলাইকুম হাই আমি মোঃ মুনজুরুল, এই ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।

নেকড়ে বনাম কুকুর: "দেখতে আমাদের মতো হওয়া আর আমাদের হওয়া এক নয়

 

নেকড়ে বনাম কুকুর: "দেখতে আমাদের মতো হওয়া আর আমাদের হওয়া এক নয়

ভূমিকা ঃ 

দেখতে আমাদের মতো হওয়া, আর আমাদের হওয়া এক নয়" — নেকড়ে গল্পের অজানা সত্যজঙ্গলের গভীরে হেঁটে চলেছে এক নেকড়ে ও তার ছোট শাবক। চারপাশে নীরবতা, শুষ্কতা, আর খাদ্যের অভাব। একসময় নেকড়ে থেমে ছেলেকে বলল,

বাবা, যদি তুমি ঘাস খেতে পারতে, তাহলে বাঁচাটা অনেক সহজ হতো। কিন্তু না — তোমার শরীর চায় মাংস। এটাই তোমার প্রকৃতির অভিশাপ।

ছোট শাবক চুপচাপ শুনছে। বাবার কণ্ঠে ক্লান্তি, দুঃখ, আর চাপা হাহাকার। নেকড়ে আবার বলল:

আমরা মানুষের মতো হিংস্র না, জানো? মানুষ আমাদের যত মেরেছে, আমরা তাদের অত মারিনি। দুর্ঘটনাবশত হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু তারপরও মানুষ হয়েছে সভ্য আর আমরা হিংস্র,

এই একটা বাক্যেই লুকিয়ে আছে একটা সমাজের নির্মম বাস্তবতা।

রাখাল, ভেড়া, আর লাঠির গল্প

হাঁটতে হাঁটতে ওরা এসে পৌঁছাল এক খামারের পাশে। খোলা মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভেড়ার দল। পাশে বসে আছে এক রাখাল। তার হাতে একটা দণ্ড বা লাঠি — যা সে প্রয়োগ করে তার পশুগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।

নেকড়ে শাবক বলল,

বাবা, আমি যাই না? তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি?

বাবা বাধা দিয়ে বলল,

না বাবা। তুমি এখনো ছোট, শিকার ধরতে পারো না। ধরা পড়লে লাঠির আঘাতে হয়তো ফিরেই আসতে পারবে না। ওদের লাঠির নির্মমতা আমি দেখেছি। তোর মাকে ওই লাঠি দিয়েই মারা হয়েছিল। মানুষ যখন দলবেঁধে আক্রমণ করে, তখন তারা দানবের মতো ভয়ানক হয়ে যায়।

কুকুর — যে দেখতে আপন, কিন্তু আসলে শত্রু

এই সময় শাবক দেখতে পেল এক পশু — দেখতে একেবারে নেকড়ের মতো। সে জিজ্ঞেস করল,

বাবা, ওইটা কে? ও তো দেখতে আমাদের মতো!

নেকড়ে বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

ও হলো কুকুর। হ্যাঁ, ও দেখতে আমাদের মতো। কিন্তু ও আমাদের কেউ না। ও মানুষের হয়ে কাজ করে, ওর জীবন ওদের সেবায় নিবেদিত। ও আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। কারণ ও আমাদের মতো হয়েও আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।

গল্পের মূল শিক্ষা

এই গল্পটি শুধুই একটি পশু কাহিনী নয় — এটি সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। যেখানে:

নেকড়ে হলো স্বাধীনতা ও বন্যতার প্রতীক, যারা বাঁচতে চায় নিজের নিয়মে।

মানুষ হলো আধিপত্য বিস্তারকারী শক্তি, যারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় — প্রয়োজনে নির্মমভাবে।

কুকুর হলো সেই শ্রেণি, যারা সুবিধার জন্য নিজের জাত, মূলনীতি বা পরিচয় বিসর্জন দেয়।

একটা সময় আসে, যখন দেখতে ‘আমাদের মতো হওয়া’ আর ‘আমাদের হওয়া’ — এই দুইয়ের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য তৈরি হয়।

উপসংহার

গল্পটি আমাদের শিখায়, কেবল চেহারায় বা ভাষায় সাদৃশ্য থাকলেই কেউ “আমাদের” হয়ে যায় না। মানুষ ও সমাজে এমন অনেকেই আছে যারা “ভেতরে শত্রু” অথচ বাইরে মিত্রের মুখোশ পরে ঘোরে।

নেকড়ে বাবার সেই কথা আজও প্রাসঙ্গিক — "দেখতে আমাদের মতো হওয়া আর আমাদের হওয়া এক না বাবা!"

FAQs:

১. নেকড়ে গল্পটি কী বোঝাতে চায়?

নেকড়ে গল্পটি সমাজের ভণ্ডামি, বিশ্বাসঘাতকতা, ও আসল শত্রুর রূপ উন্মোচনের গল্প। যারা আমাদের মতো দেখায়, তারাই অনেক সময় আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে।

২. কুকুরকে কেন নেকড়ের শত্রু বলা হলো?

কারণ কুকুর এক সময় নেকড়েরই বংশধর ছিল। কিন্তু সে মানুষকে সেবা দিয়ে নিজের প্রকৃত স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েছে এবং নিজের জাতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

৩. গল্পটি কি শিশুদের উপযোগী?

গল্পটির রূপক অর্থ বড়দের জন্য বেশি প্রযোজ্য হলেও উপস্থাপন অনুযায়ী এটি কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও উপযোগী।

৪. দেখতে আমাদের মতো হওয়া" — এই বাক্যের অর্থ কী?

এটি বোঝায়, বাহ্যিক সাদৃশ্য থাকলেও কেউ প্রকৃতপক্ষে আমাদের মতো নাও হতে পারে। অন্তরের চিন্তা, উদ্দেশ্য ও নীতিই আসল পরিচয়।

শেষ কথা:

এই গল্পটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় — সত্যিকারের বিপদ বাইরে নয়, অনেক সময় সেটা আসে ‘ভেতর থেকে’। তাই, বাহ্যিক মিল দেখে কাউকে ‘আমাদের’ ধরে নেওয়া সবসময় নিরাপদ নয়।

আপনি যদি এমন গল্প ভালোবাসেন, তাহলে শেয়ার করুন এই পোস্ট।

কারণ হয়তো আপনার বন্ধুও খুঁজছে — কে কুকুর, কে নেকড়ে!


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url