জামালপুর জেলা এক নজরে: ইতিহাস, অর্থনীতি, পর্যটন ও ঐতিহ্য (২০২৫ আপডেট
জামালপুর জেলা এক নজরে: ইতিহাস, অর্থনীতি, পর্যটন ও ঐতিহ্য (২০২৫ আপডেট)
অবস্থান
জামালপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এবং এটি ময়মনসিংহ বিভাগের
অন্তর্গত। উত্তরে ভারতের মেঘালয় ও কুড়িগ্রাম, দক্ষিণে টাঙ্গাইল, পূর্বে ময়মনসিংহ
ও শেরপুর এবং পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলা ঘিরে রেখেছে জামালপুরকে।
জেলা সদর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত।
জামালপুর জেলার ইতিহাস
১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হযরত
শাহ জামাল (রহ.) ইয়েমেন থেকে এ অঞ্চলে আসেন। তার নামানুসারে ‘জামালপুর’ নামটি রাখা
হয়।
১৮৪৫ সালে এটি ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়
এবং ১৯৭৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বাধীন জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৪ সালে শেরপুর
আলাদা জেলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে জামালপুরের গৌরব
২১ জুন: রাজাকারদের সহায়তায় ৯ নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
৩১ জুলাই: কামালপুর যুদ্ধে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ।
১৩ নভেম্বর: কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে যুদ্ধ।
৪ ডিসেম্বর: পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে (২২০ জন)।
প্রশাসনিক কাঠামো
উপজেলা: ৭টি — জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ী, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ,
দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ
ইউনিয়ন: ৬৮টি
গ্রাম: ১৩৪৬টি
মৌজা: ৮৪৪টি
পৌরসভা: ৮টি
সংসদীয় আসন: ৫টি
জনসংখ্যা ও ধর্মীয় পরিসংখ্যান
মোট জনসংখ্যা: ২৩,৮৪,৮১০ জন
পুরুষ: ৫০.৫৮%, নারী: ৪৯.৪২%
ধর্ম: মুসলিম ৯৭.৭৪%, হিন্দু ১.৯২%, খ্রিষ্টান ০.০৭%, বৌদ্ধ ০.০৪%,
অন্যান্য ০.১৪%
উপজাতি: গারো, হদি, কুর্মী, মাল
অর্থনীতি ও কৃষি
জামালপুর একটি কৃষিনির্ভর জেলা। প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে:
ধান
পাট
আখ
সরিষা
গম
চিনাবাদাম
এছাড়া জামালপুরে দেশের অন্যতম বড় শুল্ক স্টেশন এবং বৃহত্তম সার কারখানা
অবস্থিত।
ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও কুটির পণ্য
কাঁসার শিল্প: ইসলামপুরে তৈরি হয় ঘটি, বাটি, হুক্কা।
নকশীকাঁথা: সদর, বকশীগঞ্জ ও মাদারগঞ্জে উৎপাদিত নকশীকাঁথা দেশ-বিদেশে
জনপ্রিয়।
মৃৎশিল্প: পোড়ামাটির কলস, হাঁড়ি, থালা তৈরি হয়।
তাঁত শিল্প: দিকপাইত, তিতপল্লা ও মেষ্টা এলাকায় প্রচলিত।
বাঁশ ও বেতশিল্প: ডাংধরা ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামে কুলা, ঢালি, চালুন
তৈরি হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: ১টি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: ১টি
মেডিকেল কলেজ: ১টি
সরকারি কলেজ: ৮টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ২৩১টি
প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৯৭৮টি
মাদ্রাসা: ১১০টি
কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ৬টি
কিন্ডারগার্টেন: ১৭৬টি
জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবার
মেন্দা/মিল্লি/মিলানি/পিঠালি: হালিমের মতো ঘন খাবার
মাশকলাইয়ের ডাল
দই ও মিষ্টি
আনারস
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
হযরত শাহ জামাল (রহ.) এর মাজার
শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী
গারো পাহাড় ও লাউচাপড়া
মধুটিলা ইকোপার্ক
স্বপ্ননীল পার্ক
জামালপুর সার কারখানা
যমুনা নদীর তীর
ধানুয়া কামালপুর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ
দয়াময়ী মন্দির
যমুনা সিটি পার্ক
লুইস ভিলেজ রিসোর্ট
নান্দিনা পাহাড়
জামালপুর জেলার পূর্ব নাম
জামালপুর জেলার প্রাচীন নাম ছিল "সন্ন্যাসীগঞ্জ" এবং পরবর্তীতে
"সিংহজানী"। এই অঞ্চলটি সময়ের পরিক্রমায় নানা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের
মধ্য দিয়ে আজকের জামালপুরে পরিণত হয়েছে।
এই অঞ্চলের প্রাচীন পরিচিতি ছিল "গঞ্জের হাট"। এটি ছিল একটি
বাণিজ্যকেন্দ্রিক স্থান, যেখানে বিভিন্ন পণ্যের আদান-প্রদান হতো।
হিন্দু সন্ন্যাসীদের আগমন ও “সন্ন্যাসীগঞ্জ”
পরবর্তীতে, এই অঞ্চলে হিন্দু সন্ন্যাসীদের আগমন ঘটে। তাঁদের উপস্থিতি
এবং প্রভাবের কারণে স্থানটির নাম হয়ে যায় "সন্ন্যাসীগঞ্জ"। এটি ছিল ধর্মীয়
ও আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডের এক প্রাণকেন্দ্র।
জমিদার আমলে “সিংহজানী”
ব্রিটিশ আমলে জমিদার শাসনের সময় একটি মৌজার নামকরণ হয় "সিংহজানী"।
এই নামটি জমিদারদের প্রতাপ ও রাজকীয়তার প্রতীক হিসেবে প্রচলিত হয়। আজও জামালপুর শহরের
দুটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে “সিংহজানী” শব্দটি যুক্ত রয়েছে, যা
ইতিহাসের প্রমাণ বহন করে।
ইসলাম প্রচার ও "জামালপুর" নামকরণ
১৫৫৬-১৬০৫ সালের মধ্যে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ইয়েমেন থেকে আগত
সুফি দরবেশ হযরত শাহ জামাল (রহ.) এই অঞ্চলে আসেন। তাঁর নামানুসারে পরবর্তীতে এই এলাকার
নামকরণ করা হয় “জামালপুর”।
উপসংহার
জামালপুর জেলা তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, কৃষিভিত্তিক
অর্থনীতি এবং কুটিরশিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা
হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পর্যটন, শিল্প ও কৃষির বিকাশের মাধ্যমে এই জেলা আরো
সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে।
জামালপুর জেলার এমপি নাম ২০২৪
জামালপুর জেলার ইসলামপুর কিসের জন্য বিখ্যাত
জামালপুর জেলার পৌরসভা কয়টি
জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
জামালপুর জেলার থানা কয়টি